সড়ক নিরাপত্তা

প্রায় ৯০ লক্ষ জনগণ নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি উদীয়মান মেগাসিটি। এই ছোট শহরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নগরায়ন এবং শিল্পায়নের ফলে সকল আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড এখানেই সংঘটিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারের ফলে এই শহরে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন শহর থেকে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় মানুষ দলে দলে ঢাকায় ভিড় করছে।

এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে এই শহরক নানা আর্থ-সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। অপরিকল্পিত গৃহায়ন, তীব্র যানজট, রাস্তায় যানবাহনের চাপ, ফুটপাতে হকারদের আধিপত্য- সবমিলিয়ে এই জনাকীর্ণ শহরে মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।

এগুলোর পরিণতি হিসেবে ঢাকায় সড়ক নিরাপত্তা একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা আইনগুলোর অভাবে ঢাকায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এরফলে প্রতিনিয়ত অনেকে মারা যাচ্ছেন। অনেকে শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়ে বাকি জীবনের জন্য মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কাটাচ্ছেন।


অবস্থার তীব্রতা বুঝতে আমাদের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার তুলনামূলক তথ্যের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

  • বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সম্মিলিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই বাংলাদেশে ৭৮৯টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এগুলোতে ১০৪৯ জন নিহত এবং ২০১৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতে ৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৯ জন নিহত এবং ১১৫ জন আহত হয়েছে।
    জরিপ অনুযায়ী, এই সকল দুর্ঘটনার জন্য ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন যানবাহনের দায় রয়েছে। কিন্তু বাকি ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই পথচারীদের দায়ী করার ইঙ্গিত মিলেছে।    

 

একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, পথচারীদের মোট হতাহতের প্রায় ৭২ শতাংশ প্রাণঘাতী এবং মাত্র দুই শতাংশ সাধারণ আঘাত। তার মানে, ৯৮ শতাংশ মানুষ হয় মারা যান, নয়ত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

এই দুর্ঘটনাগুলোর প্রাথমিক কারণগুলো হলো, অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, এবং ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করে পথচারীদের চলাচল।

  • সড়কে দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪১.৫৩ শতাংশ ক্ষেত্রে যানবাহন মানুষকে চাপা দেয়, ১৬.১৮ শতাংশ ক্ষেত্রে যানবাহন খাদে পড়ে এবং ২৯.৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘাত ঘটে। 
  • বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৩৫ লক্ষ নিবন্ধনকৃত যানবাহন রয়েছে। কিন্তু মাত্র ২৬ লক্ষ চালকের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। 
  • বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি (বিপিডব্লিউএ) দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করে চলেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, নিবন্ধনকৃত গাড়ির পাশাপাশি আরো ১৫ লক্ষ অবৈধ যান রয়েছে। তার মানে প্রায় ২৪ লক্ষেরও বেশি বৈধ-অবৈধ যানবাহন অদক্ষ চালকেরা চালাচ্ছে, যারা নিজেদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলছে।
  • চলতি বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বিপিডব্লিউএ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৭৭ শতাংশেরও বেশি চালকের লাইসেন্স নেই। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, শহরে ৮৭ শতাংশ গণপরিবহনের চালক বেপরোয়াভাবে এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি চালায়।

এই দুর্ঘটনাগুলো পুরো শহরজুড়েই হয়। কিন্তু একটি সমীক্ষার তথ্য প্রমাণ করেছে যে, ৪০.৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা বাস স্ট্যান্ডে, ২৮.৪০ শতাংশ বাজারে, ১৭.৮০ শতাংশ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে এবং ১৩ শতাংশ দুর্ঘটনা অন্যান্য জায়গায় সংঘটিত হয়। ৫৪টি মোড়ের পুলিশ এফআইআরের তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই) জানাচ্ছে-  

  • সবগুলোর মধ্যে জসীমউদ্দীন রোডই সবচেয়ে ভয়ংকর, যেখানে ২৪টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। 
  • যথাক্রমে ১৯ এবং ১৮টি দুর্ঘটনা নিয়ে ফার্মগেট এবং কাকলী কাছাকাছিই রয়েছে। 
  • একই সময়ের মধ্যে সায়েদাবাদ এবং জসিমউদ্দীন রোড ক্রসিংয়ে যথাক্রমে ১৬ এবং ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪ এবং ১৬। 
  • যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ এবং জসিমউদ্দীন সড়কে পথচারী মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে জোয়ার সাহারা এবং প্রগতি সরণিতে এই হার সবচেয়ে কম।

উপরোক্ত তথ্যগুলো থেকে আমরা সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারি। এগুলো কেবল মৃতের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে না, দেশেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এই দুর্ঘটনাগুলোর ফলে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ৪০ হাজার কোটি ছুঁয়েছে, যা কিনা বাংলাদেশের জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ। এই সমস্যাটি সমাধানে এর প্রধান কারণগুলোকে সামনে আনা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণগুলো হলো-  

  • বেপরোয়া গাড়ি চালানো     

  অধিকাংশ চালকই অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত অথবা কমবয়স্ক। যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, চালক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং গাড়ির ফিটনেস সনদ পরীক্ষায় ব্যর্থতা- সব মিলিয়েই সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে।

  • ট্রাফিক আইনের লঙ্ঘন

চালক হোক কিংবা পথচারী- এই শহরের বাসিন্দা মাত্রই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে। গাড়িগুলো ওভারটেকিংয়ে ব্যস্ত, ট্রাফিক সিগন্যালের তোয়াক্কা করে না কেউ, রিক্সাগুলো বিপরীত লেন দিয়ে চলাচলে অভ্যস্ত অথবা সরু রাস্তায় একাধিক লাইন করে চলাচল করে এবং মোটরসাইকেলগুলো প্রায়শই ফুটপাতে উঠে যায়- এসবই তীব্র যানজট এবং দুর্ঘটনাকে উস্কে দেয়।

  • নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘন

শহরের বাসিন্দারা সড়কে অসাবধান হয়ে চলাফেরা করে। মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার না করা, গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধতে অনীহা দেখানো এবং ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি ব্যস্ত রাস্তা অতিক্রমের মতো বিপজ্জনক কাজ এই শহরবাসী নিয়মিতই করে আসছে।

  • গণপরিবহনের অভাব

সহজপ্রাপ্য গণপরিবহনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের উদ্ভব হয়েছে। সিএনজি, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি- এগুলো সবই সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়েছে। ফলে তীব্র যানজট এবং হাজার হাজার পথচারী সৃষ্টি হয়েছে। যেগুলো কোনো না কোনো সময় দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে।

  • পথচারী বিমুখ সড়ক

শহরের অধিকাংশ জায়গায় সড়কগুলো নির্মাণাধীন এবং অপরিকল্পিত। সেগুলো পথচারীবান্ধব নয়। হকারদের দখলে থাকা ফুটপাত, যানবাহনের বাড়তি চাপ এবং জেব্রা ক্রসিংয়ের অভাব- এগুলো সড়কে পথচারীদের চলাচলকে কঠিন করে তুলেছে। অনেকসময় এগুলো দুর্ঘটনারও কারণ হচ্ছে।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় যখন দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তখন রাজধানীর শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সূচনা করে সড়কগুলো দখলে নেয় এবং নিরাপদ সড়কের দাবি জানায়। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি যথাযথ সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে আগ্রহী হয়েছে। ১৯৮৩ সালের সড়ক অধ্যাদেশ আইন, যা বছরের পর বছর নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সেটি ২০১৮ সালের সড়ক পরিবাহন আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

  • নতুন আইনে চালকদের বয়স এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট রুটে যানবাহনের সংখ্যা, বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের ড্রাইভার ও হেলপারদের কর্মঘন্টা, সড়ক দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ, ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন এবং আরো অনেক কিছু যুক্ত করা হয়েছে যেগুলো আগের আইনে ছিল না।
  • নতুন আইন অনুযায়ী, ট্রাফিক আইন ভাঙলে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০০ টাকা। পূর্বের আইনে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০০ টাকা। এছাড়া ঘটনার তীব্রতা অনুধাবন করে ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে কর্মরতদের এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা অংকের জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে।
  • চালকদের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেনী পাস হতে হবে এবং কেউই লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবে না।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ন্যুনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮। পেশাদারি লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সেটি হবে ২১।
  • আইনের খসড়াটিতে একজন চালকের জন্য ১২ পয়েন্ট রাখার বিধান রাখা হয়েছে। প্রত্যেকবার অপরাধ সংগঠনের বিপরীতে তার একটি করে পয়েন্ট খোয়া যাবে। এভাবে যদি তার পয়েন্ট শূন্যতে নেমে যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া হবে। খসড়া অনুযায়ী, ৯ ধরনের অপরাধের জন্য চালকদের পয়েন্ট খোয়া যাবে।

সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, অবৈধ ওভারটেকিং, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল এবং গতিসীমার লঙ্ঘন।

এর বাইরেও সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চালকদের প্রত্যেক পাঁচ ঘন্টা অন্তর বিশ্রাম, দীর্ঘ দূরত্বের পরিবহনে বিকল্প চালক রাখা, চালক এবং তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, যাত্রাকালীন সিট বেল্টের ব্যবহার এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলতে প্রধানমন্ত্রী নিজে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।
এসডিজির একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে সকলের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী মূল্যে টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এগুলোর সাথে এই শহরকে ট্রাফিক আইন এবং সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা সেই উদ্যমী শিক্ষার্থীরা আমাদের কিছুটা আশাবাদী করে তুলছে।
যদিও, সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ এবং বাসিন্দাদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো এবং নিরাপত্তা আইনগুলোর প্রচারের মাধ্যমে এই ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত পরিবর্তন আনা সম্ভব। স্থানীয় পরিবহনগুলোকে মহাসড়ক থেকে নিষিদ্ধ করতে, বেআইনি গাড়ি পার্কিং রুখতে এবং ফুটপাতগুলোকে দখলমুক্ত করতে আরো জনবল প্রয়োজন। নগরবাসীদের সড়ক এবং পরিবহনের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে দক্ষ নয় এমন চালকদের বাদ দিতে হবে এবং কেবলমাত্র ভালো চালকদেরই লাইসেন্স দিতে হবে। হাইওয়ে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং চালকদের অবশ্যই গতিসীমা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার ফলে জান, মাল উভয়েরই ক্ষতি হয়। বর্তমানে এটিই বাংলাদেশে একটি মারাত্মক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেটির চিত্র রাজধানীতেও ব্যাপকভাবে লক্ষ্যণীয়। সমস্যা এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে মানুষের মৃত্যু এখন আমাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু যারা এর শিকার হচ্ছে তারাই এর যন্ত্রণা এবং কষ্ট বুঝতে পারছে। আমাদের বুঝতে হবে যেকোনো দিন আমরা কিংবা আমাদেরই কোনো স্বজন এর শিকার হতে পারে। সুতরাং, একটি সুন্দর শহরে বসবাসের জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। একটি নিরাপদ ঢাকার জন্য আরো ভালো সমাধান খুঁজতে সরকারকে সাহায্য করা আমাদেরই দায়িত্ব।

নিরাপদ সড়ক : আর কত প্রাণের বিনিময়ে সড়কে নিরাপত্তা আসবে?

Dhaka city, the capital of Bangladesh is an emerging megacity with a population of almost 9 million. The advent of urbanization and industrialization centres around this small city, prompting all kinds of socio-economic activities to take place here. This expansion in the economic and development sectors with new employment opportunities has attracted people from other cities to shift to Dhaka in the hopes of a better future.

Although, with the increase in population, the city is being plagued by several socio-economic problems. It is leading to unplanned living conditions, unavoidable traffic congestion, the huge number of vehicles on the roads, footpaths occupied by hawkers- all together these problems stemming from over-population has made the movement of the people in the city very difficult.

One of the many consequences of these problems is the road safety issue in Dhaka. Dhaka faces several accidents every day due to lack of safety laws. It causes a person to lose their life and, in many cases, severe physical injury traumatizing a person for the rest of their lives. To understand the severity of the situation, we need to look at the comparative data that shows the increase in the number of accidents starting from 2009 to 2018 in Bangladesh.

  • According to data compiled by Accident Research Institute (ARI) of Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET), Bangladesh witnessed a total of 789 road crashes that left 1,049 people dead and 2,015 injured from January to March in 2018, among these 57 road accidents occurred in Dhaka, taking 59 lives and injuring 115 people.

According to a survey, among these accidents, 40% was caused by different vehicles, whereas 60% of the cases indicate that the pedestrians are to be blamed.

A survey report shows that, about 72% of total casualties of pedestrians are fatal whereas only 2% of them take simple hit. That means 98% people either dies or end up being in the hospital.

Although, the primary causes behind these accidents occur due to reckless driving by unskillful drivers, faulty vehicles and pedestrians violating traffic rules.

  • On roads, 41.53 percent of the incidents involved vehicles running over people, 16.18 percent of vehicles falling into ditches and 29.72 percent of collisions.
  • . According to latest data from Bangladesh Road Transport Authority (BRTA), there are over 3.5 million registered vehicles in the country, but valid licenses have been issued to only 2.6 million drivers.
  • Bangladesh Passenger Welfare Association (BPWA), a campaigner for safe roads, claims there are around 1.5 million illegal vehicles in addition to registered vehicles, which means there could be over 2.4 million legal and illegal vehicles being driven by unqualified drivers who are putting their own lives along with those of a large number of people at risk.
  • According to a BPWA report published in April this year, over 77% drivers in Bangladesh do not have driving licenses. The Jatri Kalyan Samity said at least 87% of public transport drivers in the city drive recklessly and violate traffic law.

 

 

These accidents happen throughout the city but, it was established through a survey that about 40.90% accidents occur in Bus-Stands, 28.40% in Bazars, 17.80% in road-intersections and 13% in other areas. According to Accident Research Institute (ARI) who collected and organized all the data from police FIRs on the 54 intersections reveal

  • Jasimuddin Road is the deadliest of all which is responsible for 24 accidents.
  • Farmgate and Kakoli comes close with 19 and 18 accidents respectively.
  • Saidabad and Jasim-Uddin Road crossing caused 16 and 17 deaths in this period on which pedestrian fatality is 14 and 16 respectively.
  • Jatrabari, Saidabad and Jasim-Uddin Road has the highest percentages of pedestrian fatality where Joar Sahara and Progoti Sarani has the lowest percentage.
  •  

From the aforementioned figures, we can infer upon the condition of road safety in the city. It not only is increasing the death toll but also pushing the country towards heavy loss as the estimated economic loss from these accidents reaches Tk40,000 crore annually, which is 2% to 3% of Bangladesh’s GDP. There are some key causes that needs to be addressed in order to tackle the problem. The root causes behind these road accidents are-

  • Reckless Driving: Most of the drivers who are behind the wheels are untrained, unlicensed or underage. Due to lack of proper training facilities, failure in the appointment 5 system of the drivers and checking on the cars fitness certificate all lead to road accidents.
  • Violation of traffic rules: The residents of the city, be it the drivers or the pedestrians all violate traffic rules. The cars overtake each other, does not follow signals, rickshaws move in opposite lanes or make several lines in a narrow road and motorcycles take to the footpaths, all prompting heavy traffic and accidents.
  • Violation of safety rules: People in this city carelessly move around in the streets- lack of helmets while driving the motorcycle, refusing to wear seat-belts and pedestrians directly cross main roads instead of using the foot-over bridges.
  • Lack of public transport: Due to the lack of accessible public transportation system, the number of different types of vehicles have increased- CNGS, Buses, Taxi, Rickshaw, Motorcycles and personal cars. The roads become chaotic with heavy traffic and thousands of pedestrians which at some point causes accidents.
  • Roads are not pedestrian-friendly: In most places of the city, the roads are under-developed and unplanned. They are not at all pedestrian-friendly- Footpaths flooded with hawkers, increasing number of transports, no zebra crossings- all make it difficult for the pedestrians to move around in the streets. This at times, leads to road accidents.
  •  

When two college students died due to a horrific road accident in July 29th 2018, there was an outrage among the students of the capital who launched the Nirapad Sarak Movement, took to the streets and demanded safe roads. In the wake of this movement, the government has been keen on setting proper road safety laws in the city. The road ordinance law of 1983 which underwent many changes over the year, decreasing the penalty has been replaced by the Road Transport Act of 2018.

  • The new law is introducing specific guidelines on the minimum age and academic qualifications for drivers, number of vehicles on a particular route, working hours for drivers and helpers of buses, trucks, covered vans and other vehicles, compensation for road crash victims, emergency helpline, and more, which are not included in the existing law.
  • According to the new law, the maximum fine for breaking traffic rules is Tk6,000 as opposed to Tk500 in the old, traffic police officials should ensure that they charge heavy fines of at least Tk1,000-2,000 to press home the severity of the situation.
  • The drivers must have education not below eighth grade, and nobody will be allowed to drive vehicles without license.
  • A person must be at least 18 to get a driving license and 21 to get a professional license.
  • The draft has a provision of keeping 12 points for a driver. And the driver will lose points for committing offences. When the points come down to zero, the driver’s license will be cancelled. According to the draft, a driver will lose points for nine types of offenses, including drunk driving, illegal overtaking, reckless and dangerous driving, and violation of traffic signals and speed limits.
  •  

Other than this, the government has declared 22nd October as the National Road Safety Day. Moreover, the prime minister has given directives to ensure drivers’ rest every five hours, to introduce alternate drivers for long distance transports, training facilities for drivers and their assistants, use of seatbelts while travelling as well as going by traffic signals.

Road Safety covers one of the eleven goals in SDG, which plans on providing access to safe, affordable, accessible and sustainable transportation system for all. This along with the zeal of the students who instigated the city to be more aware about traffic rules and road safety, gives us a little hope.

Although, without the joint efforts by the government, the authorities and the city dwellers the problem cannot be solved. Through development of the traffic system, introduction to mass transportation and promotion of safety laws, can there be sufficient changes in the system. More manpower is required in banning local transports on highways, unlawful car parking and footpath occupancy. The city dwellers need to carry out proper management of roads and transports. Automobile company authorities need to filter through unskillful drivers and only good drivers should attain licenses. Highway polices should be provided with better training and a proper speed limit is to be followed.

Road accidents cause death and damages properties, which has become a deadly phenomenon in Bangladesh- reflecting heavily on the state of the capital city. The condition has become so acute that the everyday death of a number of people due to road accidents has become a normal phenomenon. The pain and hardship caused by these accidents are only fathomable by people who go through it. We need to understand that one of these days, it could be us or one of our relatives, what then? So, in order to live in a better city, we need to do better. It is our responsibility to help the government to come up with better solutions for a safer Dhaka.